শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
প্রথম আলো : কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে সৃষ্ট প্যারাবনের (ম্যানগ্রোভ) আনুমানিক ১৫ হাজার গাছ কেটে দখল করা হয়েছে কয়েক শ একরের জলাভূমি। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য। কাটা গাছের গোড়ালি যাতে প্রশাসনের কেউ দেখতে না পান এ জন্য ট্রাকে মাটি ও বালু নিয়ে চলছে ভরাটের কাজ।
কয়েক দিন ধরে প্যারাবনের বিশাল ভূমি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে সেখানে ভরাটের কার্যক্রম চালানো হলেও বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বাঁকখালী নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ, দখল বন্ধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রকাশ্যে প্যারাবনের গাছপালা উজাড় করে বালু ফেলে ভরাট প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কেটে প্যারাবন দখল ও ভরাটের সত্যতা পাওয়া গেছে। দখলদারদের তালিকা হচ্ছে, এরপর মামলা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
গত শনি ও রোববার সকাল ও বিকেলে দুই দফায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম জামে মসজিদসংলগ্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, উজাড় করা বনভূমিতে (জলাশয়) ট্রাকে করে আনা মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চালানো হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ। দখলদারদের কেউ কেউ প্যারাবনের জমিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
বনভূমির একাংশে স্থাপনা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আমির আলী নামের একজন। তিনি বলেন, এখানে (প্যারাবনে) কয়েক শ একর জমি অন্তত ২০০ লোক কিনে নিয়েছেন। তিনি (আমির আলী) কিনেছেন ১৪ শতক জমি। তবে তিনি প্যারাবনের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত নন। কিছু শ্রমিক রাতের বেলায় গাছগুলো কেটে নিয়েছেন।
নুরুল ইসলাম নামের আরেকজন টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন বিশাল এলাকা। নুরুল বলেন, এখানে কয়েকজনের জমি আছে। সব জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। কিন্তু জমির বিক্রেতার নাম, জমি কেনার রেজিস্ট্রি দলিল দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দখলদার বলেন, স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে রাতে হাজার হাজার কেউড়া, বাইনগাছ কেটে বনভূমি টিন দিয়ে ঘিরে দখলে নিচ্ছেন। এরপর প্রতি গন্ডা (দুই শতক) জমি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালীর রুকন, আমির আলী, কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ার নুরুল ইসলাম, কামাল মাঝি, শিবলু, কফিল, সানাউল্লাহ, আলম, ইব্রাহিম, ইউসুফ, মালেক, সাইফুলসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি দখলের সঙ্গে জড়িত।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, জাপানি একটি পরিবেশবাদী সংস্থার কর্মীরা জোয়ারের প্লাবন থেকে শহরবাসীকে রক্ষার জন্য বাঁকখালী নদীর তীরে কয়েক হাজার বাইন ও কেউড়াগাছের চারা রোপণ করেছিলেন কয়েক বছর আগে। সেগুলো ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। এখন সেসব গাছ কেটে জলাভূমি দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল।
কস্তুরাঘাটের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, বদরমোকাম হয়ে খুরুশকুল পর্যন্ত সংযোগ সেতু নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মূলত নদী দখল শুরু হয়। নির্মাণাধীন সেতুর দুপাশে চলছে প্যারাবন উজাড় করে নদী দখল ও ভরাটের কাজ। এতে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জোয়ার-ভাটার অংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। প্যারাবন দখল-বেদখল নিয়ে দখলদারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব–সংঘাতও চলছে।
সরেজমিনে দখল তৎপরতা দেখে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’–এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্যারাবনের অন্তত ১৫ হাজার গাছ কেটে নেওয়ার চিত্র দেখতে পান তিনি। শুধু গাছ কাটাই নয়, সেখানে প্রকাশ্যে নদী দখল, ভরাট ও দূষণ করা হচ্ছে। মৌখিক ও লিখিতভাবে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু এমং মারমা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply